শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫২ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার: শরৎকাল মানেই বাঙালী হিন্দুর পূঁজার সময়। আর পূঁজা মানেই শারদীয় দূর্গোৎসব। হিন্দু ধর্মাবল্বীদের বৃহত্তম দূর্গোৎসব শারদীয় দূর্গা পূজা।পূজার পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার সর্বস্তরের সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি অামার এ লেখা । আর এই দূর্গোৎসবকে ঘিরে প্রত্যেক সনাতন ধর্মী হিন্দুর মনে দেবীর স্তব শুনা যায়। যা দেবী সর্বভূতেষু, মাতৃ রূপেনঃ সংস্থিতা ॥ নমস্তুস্যৈই নমস্তুস্যৈই নমস্তুস্যৈই নমঃ নমঃ ॥
দূর্গাদেবীর পূজা অর্চনা প্রথমে রাজা সুরথ রাজসিক ভাবে শুরু করেন বসন্ত ঋতুতে। সেই সময়ের দূর্গাদেবীকে আখ্যায়িত করা হত বাসন্তী দেবী হিসাবে। আমরা বসন্ত কালের বাসন্তী দেবীকেই দশভূজা আকারে দেবী দূর্গারই আরাধনা করি। রাজা সুরথ সমাধিকৃত বসন্ত কালের বাসন্তী পূজা এবং শরৎকালে শ্রী রামচন্দ্র কর্তৃক অকাল বোধনের মাধ্যমে আজকের এই শারদীয় দূর্গা পূজা। কালক্রমে শ্রী রামের অকাল বোধনকৃত শরৎ কালের দূর্গা পূজাই সমধিক ভাবে প্রাধান্য ও ব্যাপকতা লাভ করে।
শ্রী রামচন্দ্র অকাল বোধনের মাধ্যমে যে দূর্গা প্রতিমার রূপ দিয়েছিলেন তাও রাজা সুরথকৃত বাসন্তী দেবীর দশভূজা ও দশ প্রহরধারিনী মাতৃরূপই। আমরা বাঙালী হিন্দু সম্প্রদায় শরৎকালের এই শারদীয় দূর্গোৎসবে যে আয়োজন করি তা সম্ভবতঃ ষোড়ষ শতাব্দীতে রাজা কংশ নারায়ন প্রথমে শুরু করেন। এই পূজোর আচার, অর্চনা, শাস্ত্রীয় নিয়মরীতির ব্যাপকতা ছিল। এই বিশাল পূজা অর্চনার ব্যয়ভার ও রাজসিক ব্যাপার হওয়ার কারণে এই পূজা তৎকালে রাজন্যবর্গরাই করতেন। পরে কালক্রমে তা ধনাঢ্যদের মাঝে এবং তারও অনেক পরে বারোয়ারী বা সার্বজনীন কিংবা সার্বজনীনভাবে দেবী দূর্গার শারদীয় দূর্গোৎসব পালন করে আসছেন সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
এর আগে ধনাঢ্য ও জমিদারগণ সামন্ত যুগে মহা সমারোহে দেবীর পূজা অর্চনা করতেন। দেবী দূর্গার পূজা অর্চনার একটি সার্বজনিক দিক দর্শন রয়েছে। এই পূজার মাধ্যমে ছোট, বড় সকল শ্রেণী পেশার লোকের একটি মিলন মেলায় পরিণত হয় এবং এর অর্ন্তনিহিত ভাব হলো বা সমন্বিতরূপ হিসাবে আমরা বুঝতে পারি দেবী দূর্গার একটি সমন্বিতরূপ কল্পনার মাধ্যমে বহুদা বিভক্ত বাঙালী হিন্দু সমাজ বুঝতে ও শিখতে পারলো যে তারা একে অপরের সম্পূরক হিসাবে কাজ করছেন।মানুষ একটি সমষ্টিগত স্বত্বা, সামাজিক স্বত্বা, রাষ্ট্রিয় স্বত্বা। একটি আর্দশ রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্যেই সুষম সামাজিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব। এ রূপ সমাজই একটি পূর্ণ মানব সত্ত্বার আদর্শ বিকাশ ও চারণ ভূমি। দূর্গা পূজার যে সমন্বিত রূপ কল্পনা করা হয়েছে তার মধ্যমনি দশভূজা দূর্গাদেবী সকল দেব-দেবীর মূল কেন্দ্র শক্তি। সকল শক্তির তিনিই আধার।
দশদিকে তিনি তার দশভূজা প্রসারিত করে যেন তিনি সর্বব্যাপি তাঁর শক্তির নির্দেশ দিচ্ছেন। দেবী দূর্গা দুষ্টের দমন এবং শিষ্টের পালন কারিনী জগৎমাতা। দূর্গা দেবীর কাঠামোতে আছে সনাতনী সমাজের চতুবর্ণ বিভাগের এক অপূর্ব সমন্বয়। ব্রাহ্মন শক্তির আধার দেবী স্বরস্বতী, ক্ষত্রিয় শক্তির আধার হলেন কার্তিক, বৈষ্যের শক্তি দেবী লক্ষী, আর শূদ্র শক্তির আধার হচ্ছেন গণপতিঃ বা গনেশ দেব। ব্রাহ্মনের মেধা, ক্ষত্রিয়ের শৌর্য্য, বৈষ্যের ধন আর শূদ্রের গনশক্তির এক শুভ সম্মেলন। দূর্গা পূজার অর্ন্তনিহিত ভাব বিশ্লেষন করলে আমরা কি দেখতে পাই ? দেখতে পাই সকল সনাতনীর শ্রেণী বিন্যাসের এক অপূর্ব মিলনস্থল এই দেবী দূর্গার পূজার মধ্যেই নিহিত আছে।
অসপৃষ্যতা ও বর্ণভেদ সকল মানব জাতির জন্য অকল্যাণ, লজ্জা ও অপমানের বিষয়। জ্ঞান শক্তি, ক্ষাত্র শক্তি, ধন শক্তি এবং শ্রম শক্তির অপূর্ব মিলনে হয় কল্যান সুখী ও আর্দশ দেশ তথা রাষ্ট্র শক্তি। চলমান সময় হলো মিলনের। বিভেদের নয়, মিলিবে আর মেলানোর যুগ। দূর্গাপূজা মানুষে মানুষ জাতিতে জাতিতে মহামিলনের সেতু বন্ধন করে। ব্রাহ্মণ, মালী, কামার-কুমার, মালাকার, বস্ত্রকার, নরসুন্দর, ঋষিদাম, ঢাকী, দক্ষ রূপকার শিল্পীর সর্ব বর্ণের মানুষের প্রতক্ষ ও পরোক্ষ প্রয়োজন পরে এই দেবী দূর্গার পূজা অর্চনায়। এটি আমাদের জাতীয় ঐক্য, জাতীয় সংহতি ও সমৃদ্ধির স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়। মোট কথা এই পূজার মাধ্যমে আসুরিক শক্তির পতন ও শুভ শক্তির বিকাশ, জাতিতে জাতিতে ভ্রাতৃত্ব বোধ, সম্প্রদায় সম্প্রদায়ের শুভ কামনা দেশ ও জাতীর শান্তি কামনাই হলো এই দেবী শক্তির পূজা ॥
Leave a Reply